ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম অঞ্চল থেকে
আপডেট সময় :
২০২৪-১২-১৬ ১৪:০২:৫২
ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম অঞ্চল থেকে
দেলোয়ার হোসেন সোহেল একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে গরু ও মহিষের গাড়ির প্রচলন ছিল। রাজশাহী তানোর উপজেলা এর চলাচল কোন অংশে কম ছিল না। গরু ও মহিষের গাড়িই ছিল যোগাযোগের একমাত্র বাহন। তানোর থেকে চৌবাড়ীয়া অন্যদিকে মুন্ডুমালা কৃষ্ণাপুর আমনুরা এদিকে কালিগঞ্জ চান্দুরিয়া সরনজাই বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় এই গরু ও মহিষের গাড়ি ছিল একমাত্র চলাচলের মাধ্যম তবে রাস্তাগুলো ছিল কাঁচা মাটির তৈরি।
কালের পরিক্রমা আধুনিকতার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহী গরু ও মহিষের গাড়ি এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। গ্রামগঞ্জে আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরু-মহিষের গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না।পল্লি এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরু-মহিষের গাড়ি।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের কৃষি ফসল বহন ও মানুষ বহনের প্রিয় বাহন ছিল দু-চাকার এই গরু-মহিষের গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে এ বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরু-মহিষের গাড়ি এখন অধিকাংশ এলাকা থেকে বিলুপ্তির পথে।
দুই যুগ আগেও তানোরে গরু-মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে গরু ও মহিষের গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘ তুমি কেমন গাড়িয়াল শুধু টানো পরের মাল, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে,এরকম যগান্তকারী সব রকমের গান।
আজ চলতি মাসের ১৫ই ডিসেম্বর (রবিবার) ঠিক দুপুর ১ টার সময় হঠাৎ তানোর থানার মোড়ের ব্যস্ত রাস্তায় চোখে পড়ল ৫টি মহিষের গাড়ি তারা আসছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমনুরা বাজারের পাশের গ্রাম থেকে তাদের দেখে ঐতিহ্য মনে পড়ে গেল তাদের থামিয়ে কথা বললাম একজনের নাম আমিনুল তার বাসা মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামে (গাড়িয়াল) বলেন তারা এক মাস আগে সেখানে গিয়েছিলের এই মহিষের গাড়িতে করে জমিতে থাকা ধান পরিবহন করতেন তারা এখন বাড়ি ফিরছেন।
একই এলাকার আরেকজন গাড়িয়াল আব্দুল খালেক বলেন, প্রান্তিক এলাকাগুলোতে পাঁকা রাস্তা না থাকায় ধান উঠার মৌসুমে আমরা সেই এলাকাগুলোতে গিয়ে জমি থেকে গিরস্থর খড়সহ ধান পরিবহন করি।
হঠাৎ তানোর থানার মোড়ে মহিষের গাড়ি দেখে ফেল ফেল করে তাকিয়ে ছিল কিছু বয়স্ক মানুষ তাদের মধ্যে থাকা রুস্তম আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,
আগে আমাদের নিজেদেরও গরু ও মহিষের গাড়ি ছিল। সেই গাড়িতে করে কৃষি পণ্য ও হাট-বাজার থেকে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করা হতো। এখন গরু ও মহিষের গাড়ি তেমন একটা চোখে পড়ে না।
বিশেষ করে প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার তানোর বাজারে মানুষ ও মালামাল পরিবহনের একমাত্র বাহন হিসেবে এই গরু বা মহিষের গাড়িই ছিল। তিনি আরো বলেন,বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, পিকআপসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, অটো, ভ্যান,ভুটভুটি ইত্যাদি।
ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরু-মহিষের গাড়ি। অথচ গরুর - মহিষের গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না।
কৌতূহলে"তানোর থানার মোড়ের ব্যবসায়িক আলহাজ্ব সালাউদ্দিনের সাথে এই গরু ও মহিষের গাড়ির অতীত জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের তানোরের জনপ্রিয় বাহন ছিল গরু আর মহিষের গাড়ি।বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল বহন ও মানুষ বহনের প্রিয় বাহন ছিল দু-চাকার এই গরু আর মহিষের গাড়ি।
যুগের পরিবর্তনে এই বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরু ও মহিষের গাড়ি এখন তানোর উপজেলা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে। এখন এসব বাহন রূপকথার গল্পমাত্র এবং সংবাদপত্র ও বইয়ের পাতায়। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরু ও মহিষের গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না।
আসলে এই গরু বা মহিষের গাড়ি তানোর উপজেলার মানুষের একমাত্র পরিবহন এই কথাটি ভাবলেই যেন মনটার মধ্যে কেমন হয় বর্তমান আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরু ও মহিষের গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে।
সে কারণে শহরের ছেলেমেয়েরা তো দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরু কিংবা মহিষের গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। যুগ যুগ ধরে কৃষকের কৃষি ফসল রপণ ও বহনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল গরু আর মহিষের গাড়ি।
গরু- মহিষের গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট মহিষ -গরু বা বলদে দিয়ে টানা এক প্রকার বিশেষ যান। গরু- মহিষের গাড়ির চাকা গুলো শুকনো কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ এবং মহিষ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে।সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বসেন যাত্রীরা।বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স